লঞ্চ চালু চান ব্যবসায়ীরা
দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আগামী ২৪ মে থেকে সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলসহ বিভিন্ন ট্যাক্স ও চার্জ মওকুফের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ- চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা।
দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আগামী ২৪ মে থেকে সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলসহ বিভিন্ন ট্যাক্স ও চার্জ মওকুফের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ- চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা।
শনিবার (২২ মে) রাজধানীর সদরঘাটস্থ বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল ভবনের নীচ তলায় সংস্থার নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এসময় সংস্থাটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, গত মার্চ মাস থেকে ২য় বারের মতো কোভিড-১৯ আমাদের দেশে হানা দেয়।
সরকার পণ্যবাহী গাড়ি ও নৌযান ছাড়া গণপরিবহনসহ সব কিছু লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসে। আমরা তা মেনে নিয়েছি।
ফলে নৌ খাত এক ক্রান্তিকালের শরণাপন্ন ও একেবারে ধ্বংসের সম্মুখিন হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম সরকার গার্মেন্টস, দোকানপাট, শপিংমল, হোটেল-রেস্তরাঁ খুলে দিয়েছে।
পাশাপাশি সব মহানগরী ও জেলা শহরগুলোতে গণপরিবহনসহ প্লেন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু অবহেলিত লঞ্চখাত। এই বৈষম্য কেন?
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে অগ্রিম আয়কর, বিআইডব্লিউটিএ কে অগ্রীম কঞ্জারভেন্স, ডিজি শিপিংকে অগ্রিম সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে যাচ্ছি। লঞ্চ চলুক আর না চলুক তাতে সরকার এক টাকাও মাফ করে না। আমরা বিভিন্নভাবে বলেছি যে অন্তত মাওয়া ও আরিচা যেহেতু পারাপার সার্ভিস সেহেতু ফেরিতে গাদাগাদি যাতে না হয় সে জন্য লঞ্চগুলি চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা শর্তেও মানুষ নাড়ির টানে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করেনি। ঈদের সময় ঢাকা থেকে ২২০টি লঞ্চ দিয়ে আমরা যেখানে হিমশিম খাচ্ছি সেখানে মাত্র গুটি কয়েক ফেরি দিয়ে লাখ লাখ যাত্রী পারাপার করা কোনো মতে সম্ভব নয়। ফলে আমরা দেখতে পরেছি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রশি বেয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে মানুষ। ১০০ টাকার ভাড়া এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ৬ জন যাত্রীর অকাল মৃত্যুও হয়েছে। সবচাইতে বড় কথা হলো যে স্বাস্থ্যবিধির কারণে ‘লকডাউন’ দেওয়া হয়েছে কোথাও সেই স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা যাচ্ছে না। তবে কেন লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বদিউজ্জামান বাদল বলেন, গত বছর দুই মাস লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেজন্য লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রকার প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। বর্তমানে আমরা শুধুমাত্র শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন ও এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেওয়ার জন্য প্রায় বিশ কোটি টাকা প্রণোদনা চেয়েছি। কিন্তু সরকার তথা নৌ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
২৪ তারিখ থেকে যদি সরকার লঞ্চ চলাচলের অনুমতি না দেয় তাহলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে কিছু করতে চাই না। ২৪ তারিখের পরে অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে। সেটা হলো সরকারের সঙ্গে দেন দরবার। আর তা করেই আমরা আমাদের অধিকার আদায় করতে চাই। আমরা কোনো আন্দোলনে যেতে চাই না। সরকার যদি আমাদের নৌ চলাচলের অনুমতি দেয় তাহলে আমরা আগের থেকে আরো কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করবো বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামী ২৪ তারিখ থেকে সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া। শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন বোনাস দেওয়ার জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বরাবর প্রণোদনার জন্য আবেদন করা হয়েছে তা অনতিবিলম্বে মালিকদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। এনবিআর কর্তৃক ধারণক্ষমতার উপর অগ্রীম দেওয়া ৬ মাসের ট্যাক্স আনুপাতিক হারে মওকুফ করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ এর ৬ মাসের কঞ্জারভেন্সি ও বাদিং চার্জ মওকুফ, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ৬ মাসের সার্ভে ফি, ব্যাংক লোনের ৬ মাসের সুদ মওকুফ করার দাবি জানানো হয়।